"মাসির কোলে একটা জীবন"

সজীবের বয়স যখন মাত্র ৬ মাস, তখন তার মা কঠিন অসুস্থতায় মারা যান। বাবা কর্মসূত্রে দেশের বাইরে থাকতেন। সজীবকে কে দেখবে, কে আগলে রাখবে—এই প্রশ্নে পরিবার যখন দিশেহারা, তখন এগিয়ে এলেন তার মাসি, নীরা।

নীরা তখন সদ্য কলেজ পাশ করা তরুণী। স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা, নিজের ক্যারিয়ার। কিন্তু সজীবকে প্রথম কোলে নিতেই তাঁর বুক কেঁপে উঠল। সজীবের মুখে নিজের বোনের ছায়া দেখতে পেলেন। সেই দিন থেকেই সজীব হয়ে উঠল তার জীবন।

পাঁচজনের কথায় কান না দিয়ে নীরা বোনের ছেলেকে নিজের সন্তান হিসেবে বড় করতে থাকলেন। সজীব "মা" বলেই ডাকত তাকে।
স্কুলে ভর্তি করানো, রাত জেগে তার পড়া নেওয়া, অসুস্থ হলে কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া—সব দায়িত্ব পালন করলেন মাসি। অথচ সমাজ বলত, “এটা তো তোমার নিজের সন্তান না।”

নীরা মুচকি হেসে বলতেন,
“রক্তের সম্পর্কের চাইতেও গভীর হয় হৃদয়ের বন্ধন। ও আমার বুকের টুকরো।”

বছর কেটে যায়। সজীব ধীরে ধীরে বড় হয়, মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। সে জানত না ছোটবেলায় কীভাবে মাসি তার নিজের জীবনটা আটকে রেখে শুধু তার জন্য বেঁচে থেকেছে।

মেডিকেলের প্রথম বেতন হাতে পেয়ে সজীব মাসির সামনে এসে বসে বলে—
“মাসি না থাকলে, আমি কিছুই হতাম না। আমি যদি ডাক্তার হই, তুমি আমার জীবনের প্রথম রোগী, আর সবচেয়ে বড় শিক্ষিকা।”

নীরার চোখ ভিজে যায়। সে বলে—
“তুই তো শুধু ভাগনে না রে, তুই আমার সন্তান। আমার জীবনের গর্ব।”

Comments