"মায়ের আঁচলে বাঁধা জীবন"
ছোট্ট সোহান যখন পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারায়, তখন তার পুরো পৃথিবী হয়ে ওঠে তার মা রুনা বেগম। গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা রুনা, নিজের অল্প বেতনের আয়ে সোহানকে বড় করতে থাকেন। সংসারের অভাব-অনটন, সমাজের নানা কথা—সব কিছু মেনে নিয়ে তিনি ছেলেকে মানুষ করার শপথ নেন।
সোহান ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। মা ছেলের জন্য নিজের শখ-আহ্লাদ সব ত্যাগ করেন—নিজের পুরোনো শাড়ি পরেন, নতুন কিছু কেনেন না, দিনের পর দিন পুষ্টিকর খাবার নিজের ভাগে না রেখে ছেলেকে দেন। স্কুল থেকে ফিরে তিনি ছেলের পড়াশোনায় মন দেন। রাতে নিজের পড়ানোর কাজ শেষ করে নিঃশব্দে ছেলের পাশে বসে থাকেন, তার ভবিষ্যতের কথা ভাবেন।
বছর পেরিয়ে যায়। সোহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। মাকে ছেড়ে প্রথমবারের মতো এত দূরে। প্রতিদিন ফোন করে জানতে চায়—"মা, তুমি ঠিক আছো তো?" রুনা উত্তর দেন—"আমি তোকে নিয়ে বেঁচে আছি, আমি ভালোই আছি।"
বছর কয়েক পর সোহান বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে চলে যায়। মায়ের চোখে জল, কিন্তু মুখে হাসি—"আমার ছেলে আকাশ ছুঁবে, আমি জানি।"
একদিন অনেক বছর পর, গ্রামের সেই কাঁচা বাড়ির সামনে একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। সোহান, এখন একজন সফল চিকিৎসক, মাকে নিয়ে যায় শহরে নিজের বাড়িতে। কিন্তু রুনা বলেন, "আমি তোকে বড় করেছি শুধু তোর পাশে থাকার জন্য না, তোকে মানুষ করাই আমার স্বপ্ন ছিল। আমি এখানেই ভালো আছি।"
সোহান মায়ের পা ছুঁয়ে বলে—
"তুমি না থাকলে আমি কিছুই হতাম না, মা। তোমার ভালোবাসায় আমার সব আছে।"
Comments
Post a Comment